বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
এ জে এম আমিনুল হক, বীর উত্তম
গ্রাম বাঁশবাড়িয়া, উপজেলা টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
বাবা নূরুল হক, মা ফাতেমা জোহরা। স্ত্রী মরিয়ম হক। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৩।
মৃত্যু ২০১১।
ঘণ্টা খানেক আগে সংঘটিত হয়েছে ভয়াবহ যুদ্ধ। যুদ্ধের দামামা থেমে গেলেও দুই পক্ষ থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে গোলা বর্ষিত হচ্ছে। গোটা যুদ্ধক্ষেত্র মহাশ্মশান। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে মৃতদেহ। কোনো জ্যান্ত মানুষ নেই। পাখিরাও পালিয়েছে।
এ জে এম আমিনুল হক মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো প্লাটুনের কয়েকজনকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তাঁর অধীন মুক্তিযোদ্ধা দলের বেশির ভাগ আহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর দলের একটি উপদলের দলনেতা (আমীন আহম্মেদ চৌধুরী, বীর বিক্রম) নিখোঁজ। তিনি জীবিত না মৃত, কেউ জানেন না। মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করার পর চারদিকে পাকিস্তানি সেনারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা খুঁজছে জীবিত ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের। মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে গুলি। মাঝেমধ্যে এসে পড়ছে বোমা। এ জে এম আমিনুল হক এতে বিচলিত হলেন না। খুঁজতে থাকলেন উপদলনেতাকে।
তখন আনুমানিক সকাল সোয়া আটটা। এ সময় এ জে এম আমিনুল হক শালবনের ভেতর থেকে দেখতে পেলেন তাঁকে। একটা গর্তের ভেতর চিত হয়ে পড়ে আছেন তিনি।
আমিনুল হক সহযোদ্ধাদের বললেন তাঁকে উদ্ধার করে আনতে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ইতস্তত ভাব। কারণ, সেদিক দিয়ে গুলি ছুটে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি একাই ক্রল করে রওনা হলেন উপ-দলনেতার উদ্দেশে। তখন তাঁর অনুগামী হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা।
এ ঘটনা নকশী বিওপিতে ঘটে ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট। সেদিন মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নকশী বিওপির পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন এ জে এম আমিনুল হক। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মূল আক্রমণকারী ছিল ব্রাভো ও ডেলটা কোম্পানি। যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী। নকশী বিওপির অবস্থান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলায়।
সেদিনকার সেই বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে ওই যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ২৬ জন শহীদ এবং অনেকে আহত হন। নকশী বিওপির যুদ্ধে এ জে এম আমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা সফল না হলেও পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বেশ সফলতা অর্জন করেন।
এ জে এম আমিনুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফিল্ড ইন্টেলিজেন্সের অধীনে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে তাতে যোগ দেন। পরে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
এবার এনসিপির সঙ্গে ‘সম্পর্কচ্ছেদের’ কথা জানালেন মাওলানা ভাসানীর দৌহিত্র
-
তাসনিম জারা ও তাজনূভা জাবীনের পদত্যাগ: যা বললেন নাহিদ ইসলাম
-
আমি এই এনসিপির অংশ হচ্ছি না: মাহফুজ আলম
-
এক দিনে প্রায় ৩ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ তাসনিম জারার
-
ওসমান হাদি হত্যার বিচার, ভারতীয়দের কাজের অনুমতি বাতিলসহ চার দফা ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের