বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
এ আর আজম চৌধুরী, বীর বিক্রম
গ্রাম বাজিতপুর, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বাবা আফতাবউদ্দিন চৌধুরী, মা হালিমা চৌধুরী। স্ত্রী জেসমিন চৌধুরী। তাঁদের তিন ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ০৮।
মৃত্যু ২০০২।
সোনাবাড়িয়া সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে উত্তরে। কলারোয়া উপজেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮-২০ তারিখে এখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন এ আর আজম চৌধুরী।
এ আর আজম চৌধুরী তখন কুষ্টিয়া অঞ্চলে যুদ্ধরত ছিলেন। এই যুদ্ধের জন্য তাঁকে সেখান থেকে হাকিমপুরে আনা হয়। তাঁর দলে ছিল ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে সোনাবাড়িয়ায় পৌঁছান।
যুদ্ধের ছক অনুসারে সোনাবাড়িয়ায় যে স্থানে তাঁদের অবস্থান নেওয়ার কথা, সেখানে বাস্তবে ১০০ গজের বেশি উন্মুক্ত স্থান ছিল না। এ জন্য তিনি আরও ৫০০ গজ সামনে এগিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। সেখানে ছিল একটি নালা।
১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে হাজির হয় একদল পাকিস্তানি সেনা। তারা আসে একটি জিপ, একটি পিকআপ এবং তিনটি তিন-টনি লরিতে চেপে। সেগুলো আওতায় আসামাত্র এ আর আজম চৌধুরীর সংকেতে গর্জে ওঠে সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গোলাগুলি চলে বিকেল পর্যন্ত।
এরপর পাকিস্তানি সেনারা আর্টিলারির সহায়তায় পিছিয়ে যায়। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২০-২২ জন হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন শহীদ হন। পরের দিনও সেখানে যুদ্ধ হয়। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা দুই দিক থেকে আক্রমণ করে। এ আর আজম চৌধুরী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন।
২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ দিনও তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স থেকে তাঁকে পশ্চাদপসরণ করতে বলা হয়। তখন তিনি পশ্চাদপসরণ করে হাকিমপুরে ফিরে যান।
এ আর আজম চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে প্রেষণে যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন ৪ নম্বর উইংয়ে সহকারী অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কুষ্টিয়ার যুদ্ধে এ আর আজম চৌধুরী সার্বিক নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ মার্চ ভোর পাঁচটার সময় কুষ্টিয়ায় আক্রমণ করেন। ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ আর আজম চৌধুরী প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৪ নম্বর সেক্টরের লালবাজার সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধেই তিনি অগ্রভাগে থাকতেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে: মির্জা ফখরুল
-
যেকোনো মূল্যে দনবাস দখল করব: পুতিন
-
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি স্বজনদের কথা
-
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে জুবাইদা রহমান
-
শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে