বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

এম মিজানুর রহমান, বীর প্রতীক

  • গ্রাম বড় মোকাম, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ। বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী।

  • বাবা মজিবর রহমান, মা সুফিয়া খাতুন।

  • স্ত্রী গুলশান আরা। তাঁদের চার ছেলে ও দুই মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৩০। গেজেটে নাম মিজানুর রহমান মিয়া।

এম মিজানুর রহমান

১৫ নভেম্বর এম মিজানুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। মিজানুর রহমান তাঁর সহযোদ্ধাদের আক্রমণ আরও জোরদার করার নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা আবারও বড় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ সময় আহত হলেন তাঁদের অধিনায়ক। এদিন আক্রমণে ছিল মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। সব দলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আবু তাহের (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল)।

১৪ নভেম্বর রাত তিনটা বা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের তিন পাশে অবস্থান নেন। এর আগে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়। কিন্তু ওই গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী বাংকারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ভোর সাড়ে পাঁচটা বা তার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ শুরু করে সামনে এগোতে থাকেন।

এম মিজানুর রহমান তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে গুলি করতে করতে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের একদম কাছে চলে যান। তাঁদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তাঁর অধিনায়ক মেজর আবু তাহের বিজয় আসন্ন ভেবে এগিয়ে যান। তখন আনুমানিক সকাল নয়টা। তখন তাঁর সামনে শত্রুর ছোড়া একটি শেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরিত শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আবু তাহের আহত হন এবং পড়ে যান। এ দৃশ্য দেখে সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। আবু তাহেরের আহত হওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এম মিজানুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টায়ই মুক্তিযোদ্ধারা আবার মনোবল ফিরে পান এবং যুদ্ধ করতে থাকেন। আবু তাহের আহত হওয়ার পর এম মিজানুর রহমানই ওই যুদ্ধে সার্বিক নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালে এম মিজানুর রহমান ঢাকায় একটি বিদেশি ব্যাংকে (আমেরিকান এক্সপ্রেস) কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চাকরিতে আর যোগ না দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান। পরে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর প্রথম বাংলাদেশ অফিসার্স ওয়ার কোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পরে চাকরি নেন সোনালী ব্যাংকে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান