বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আহসান উল্লাহ, বীর প্রতীক
গ্রাম আহমেদপুর, উপজেলা সোনাগাজী, ফেনী।
বাবা আমিন উল্লাহ, মা জরিফা খাতুন। স্ত্রী নূরজাহান বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৭৮।
মৃত্যু ২০০৭।
মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো দলের একটি উপদলের দলনেতা আহসান উল্লাহ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের কাছে থাকা ছোট রেডিওটা অন করলেন। নব্ ঘুরিয়ে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র ধরলেন। এই কেন্দ্র থেকে একটি গান বাজার কথা। সেটা শুধু তিনিই জানেন। টিকটিক করে সময় গড়াতে লাগল। উত্কণ্ঠা নিয়ে বসে আছেন তিনি। ঠিক যখন সাড়ে সাতটা, তখন তিনি শুনতে পেলেন তাঁর সেই কাঙ্ক্ষিত গান।
আহসান উল্লাহ। দ্রুত সহযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোদের একত্র করে জানালেন, আজ রাতেই চালাতে হবে তাঁদের প্রতীক্ষিত অপারেশন। তারপর আবেগময় কণ্ঠে সবাই শপথবাক্য পাঠ করলেন। এরপর সারা দিন গোপন শিবিরে উত্কণ্ঠায় কাটল। রাতে রওনা হলেন লক্ষ্যস্থলের দিকে। গোপন শিবির থেকে লক্ষ্যস্থল পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরের পথ।
তাঁরা লক্ষ্যস্থলে যখন পৌঁছালেন, তখন ভোর সাড়ে চারটা। তাঁর সহযোদ্ধারা দ্রুত বুকে মাইন বেঁধে নিলেন। তারপর পায়ে ফিনস পরে নিঃশব্দে নেমে পড়লেন পানিতে। পশুর নদীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে জাহাজ। পানিতে নেমে নৌ-কমান্ডোরা ছড়িয়ে পড়লেন জাহাজগুলো লক্ষ্য করে। কোনো জাহাজের জন্য দুজন, কোনো জাহাজের জন্য একজন।
নদীতে বড় বড় ঢেউ। বিশাল একেকটা ঢেউ শোঁ শোঁ শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে নৌ-কমান্ডোদের নাক ও মুখের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে বন্দরের সার্চলাইটের আলো সমানে ঘুরছে নদীর ওপর। কোনো কোনো জাহাজের সার্চলাইটও জ্বালানো। আলোর ঝলকানির মধ্যেই তাঁরা এগিয়ে যেতে থাকেন।
এসব কিছু উপেক্ষা করে নৌ-কমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে বেশির ভাগ জাহাজে লিমপেট মাইন সংযুক্ত করলেন। তারপর সময়ক্ষেপণ না করে সাঁতার কেটে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা বা পৌনে ছয়টা। মাঝনদীতে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটল বিকট শব্দে। দু-তিন মিনিট পর আরেকটি। তারপর নদীতে শুরু হলো লঙ্কাকাণ্ড। একনাগাড়ে সাত-আট মিনিট ধরে একটির পর একটি মাইনের বিস্ফোরণ। ৩৫-৪০টি মাইনের কান-ফাটানো শব্দে বন্দরে অবস্থানরত আতঙ্কিত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করতে লাগল।
এ ঘটনা ঘটেছিল মংলা বন্দরে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৬ আগস্ট)। পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোদের অপারেশন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। মংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌ-কমান্ডো অংশ নেন।
আহসান উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলঁ নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে তাতে যোগ দেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
জামিনে ছাড়া পেয়েই অপরাধে জড়িত, কিশোরকে অপহরণ
-
কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
-
পাবনায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা
-
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফিৎসোর অবস্থা এখনো গুরুতর
-
ধোনি-ঝড়ের পরও চেন্নাইয়ের বিদায়, শেষ চারে কোহলির বেঙ্গালুরু