বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আহমেদ হোসেন, বীর প্রতীক
গ্রাম কুসুমপাড়া, উপজেলা পটিয়া, চট্টগ্রাম।
বাবা আছাদ আলী মাস্টার, মা জমিলা খাতুন।
স্ত্রী মতিয়া খানম। তাঁদের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৭৫।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী দুপুরে একযোগে আক্রমণ চালাল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি বড় দলের নেতৃত্বে আহমেদ হোসেন। তাঁদের বেশির ভাগই ইপিআর সদস্য। চারদিকে প্রচণ্ড গোলাগুলি—মেশিনগানের অবিরাম গুলি, ট্যাংকের ঘড়ঘড় শব্দ, কামান-মর্টারের গোলাবর্ষণ। মহা এক ধ্বংসযজ্ঞ।
ডানে-বাঁয়ে প্রায় আধা মাইলের বেশি এলাকাজুড়ে চলছে যুদ্ধ। আহমেদ হোসেনের ওপর তাঁদের মূল আক্রমণকারী দলকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব। এ ছাড়া পাকিস্তানি সেনারা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়লে বা পেছন থেকে প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা চালালে তাদের আটকাতে হবে। তা না হলে যুদ্ধে বিজয় কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ দায়িত্বটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আহমেদ হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেই দায়িত্বটা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কয়েকটি প্রতি আক্রমণ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করলেন। তাঁর ও সহযোদ্ধাদের বীরত্বে ব্যর্থ হয়ে গেল পাকিস্তানি সেনাদের সব প্রচেষ্টা।
বিকেলের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। পিছিয়ে যেতে থাকে তারা। মিত্রবাহিনীর ট্যাংকগুলো ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে। দখল হয়ে গেল শত্রুর একটি বড় ঘাঁটি। এ ঘটনা ঘটে ময়দানদিঘিতে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর।
ময়দানদিঘি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার অন্তর্গত। বোদা-পঞ্চগড় সড়কের পাশে তার অবস্থান। পঞ্চগড় দখল করার পর মুক্তিযোদ্ধারা ময়দানদিঘি আক্রমণ করেন। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুর্ভেদ্য বাংকার ও প্রতিরক্ষা অবস্থান তৈরি করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল।
ময়দানদিঘি আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিত্রবাহিনীও যোগ দেয়। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ছিল কয়েকটি ট্যাংক। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল শক্তি ছিলেন ইপিআর সদস্যরা। সংখ্যায় ছিলেন তাঁরা ৭০ থেকে ৭৫ জন। আর ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। সব মিলিয়ে তাঁদের সংখ্যা ২০০। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আহমেদ হোসেন।
চাকরি করতেন তিনি ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঠাকুরগাঁও ইপিআর উইংয়ে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাবসেক্টরে। রানীর বন্দর, চাম্পাতলী, খানসামা, পঞ্চগড়, নুনিয়াপাড়াসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ২৮ জুলাই নুনিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি আহত হন। সুস্থ হয়ে পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
দেশে বিরল রোগ উইলসন্সের জিনগত রূপান্তর শনাক্ত
-
সিলেটে নতুন গৃহকর বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছেই
-
দুর্বল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করতে হবে, বলেছেন সাদিক আহমেদ
-
ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে ওবায়দুল কাদের প্রলাপ বকছেন: রিজভী
-
দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললেন, ‘এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম’