বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, বীর বিক্রম

  • গ্রাম চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা বাসা ১৫৪, লেন ৪, ইস্টার্ন রোড, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।

  • বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস, মা চেমন আরা বেগম।

  • স্ত্রী সৈয়দা ইসমাত নাসিম। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ০২।

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে ১৩-১৪ এপ্রিল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম (এ এস এম নাসিম) তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে আশুগঞ্জে (রিয়ার) প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। তখন পর্যন্ত আশুগঞ্জ মুক্ত ছিল। দখলের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৩ এপ্রিল সড়কপথে পার্শ্ববর্তী ভৈরবে উপস্থিত হয়। পরদিন হেলিকপ্টার থেকে কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্রায় এক কোম্পানি সেনা আশুগঞ্জ বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রের পেছনে নামে। গানবোট ও অ্যাসল্ট ক্রাফটের সাহায্যে নদীপথেও সেনা আসে।

১৪ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর কয়েকটি জঙ্গি বিমান আশুগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আকাশ থেকে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। এর ছত্রচ্ছায়ায় দুপুর ১২টার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল (কমান্ডো) হেলিকপ্টারে করে নাসিমের প্রতিরক্ষা অবস্থানের পেছনে (সোহাগপুর) অবতরণ করে।

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম এতে দমে যাননি। অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থান পুনর্বিন্যাস করেন। এরপর দ্রুত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের আক্রমণের ধারা ও অবস্থান চিহ্নিত করে সহযোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের মুখোমুখি হন। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

নাসিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলকে মোকাবিলা করেন। তাঁর সহযোদ্ধাদের আক্রমণের প্রচণ্ডতায় কমান্ডোরা কিছুটা পিছু হটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আবার সংগঠিত হয়ে নাসিমের দলকে পাল্টা আক্রমণ করে। চার ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। কোনো স্থানে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধ হয়।

একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমের দলকে প্রায় ঘেরাও করে আক্রমণ চালায়। এতে তাঁর সহযোদ্ধাদের বেশির ভাগ আহত ও কয়েকজন শহীদ হন। তিনি নিজেও আহত হন। নাসিমের সামনে পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। প্রতিরোধযুদ্ধে নাসিমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন।

প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নাসিম প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের পঞ্চবটী সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। আশুগঞ্জ, মনতলা, মাধবপুর, শাহবাজপুর ও চান্দুরার যুদ্ধ তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম চান্দুরায় পুনরায় আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান