বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবু তাহের, বীর প্রতীক

  • গ্রাম বড় হলদিয়া, উপজেলা মতলব, চাঁদপুর।

  • বাবা গোলাম আহমেদ সিকদার, মা আমেনা বেগম। স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৯৪।

  • মৃত্যু ২০০৮।

আবু তাহের

কুমিল্লা শহর ছিল ২ নম্বর সেক্টরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। যোগাযোগের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমানঘাঁটি, ময়নামতি সেনানিবাস এবং এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মুক্তিযুদ্ধকালে কৌশলগত দিক দিয়ে কুমিল্লার তাত্পর্য ছিল অপরিসীম। যৌথ বাহিনীর দাউদকান্দি ও চাঁদপুরমুখী যেকোনো অভিযান পরিচালনার জন্য কুমিল্লাই ছিল একমাত্র পথ।

আবু তাহেররা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া পৌঁছান। চিওড়া বাজারের উত্তর দিকে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি প্রতিরক্ষা। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কোনো রকম প্রতিরোধ দূরের কথা, পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ৫ ডিসেম্বর প্রায় নির্বিঘ্নেই কুমিল্লা শহরের পূর্ব পাশে বালুতুফা পৌঁছান। পথে তাঁদের কোথাও তেমন যুদ্ধে জড়াতে হয়নি।

বালুতুফার অদূরেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা। পাকা বাংকারে পাকিস্তানি সেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিল। বাংকারগুলো ছিল ট্যাংকের গোলা প্রতিরোধে সক্ষম। সেখানে ছিল পাকিস্তানিদের তিন সারির প্রতিরক্ষা লাইন। সব মিলে দুর্ভেদ্য এক প্রতিরক্ষা। আবু তাহেররা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় সেখানে আক্রমণ চালান। বিপুল বিক্রমে তাঁরা যুদ্ধ করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে উচ্ছেদে তাঁরা ব্যর্থ হন।

যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মিত্রবাহিনীর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে মাটি কামড়ে অবস্থান ধরে রাখে। পাকিস্তানিদের তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ছিল অনেক কম। এত কম শক্তি নিয়ে সম্মুখযুদ্ধ করে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা ছিল বেশ দুরূহ।

এ অবস্থায় আবু তাহেরের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ না করে তাদের পেছন দিয়ে কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হওয়ার। ৬ ডিসেম্বর আবু তাহেরসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রায় বোকা বানিয়ে এবং কোনো যুদ্ধ না করেই কুমিল্লা শহরে ঢুকে পড়েন। বালুতুফায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগামী দল কুমিল্লা বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হয়।

এ দলে আবু তাহেরও ছিলেন। মিত্রবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা কুমিল্লা বিমানবন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। তখন সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। তুমুল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে আবু তাহের যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

আবু তাহের চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। পদবি ছিল হাবিলদার। ২৫ মার্চ তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোতায়েন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে তিনি তেলিয়াপাড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান