বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবুল হোসেন, বীর প্রতীক
গ্রাম লোহাগড়া, উপজেলা ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
বাবা আবু বকর, মা ফাতেমা বেগম। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৬৩। গেজেটে নাম আবুল হাশেম।
শহীদ ২৮ আগস্ট ১৯৭১।
আবুল হোসেন (আবুল হাশেম) চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে ঢাকার পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে ঢাকা সেক্টরের অধীনে সিগন্যালম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিলখানাতে ইপিআরের ১৩, ১৫, ১৬ উইং, হেডকোয়ার্টার্স উইং এবং সিগন্যাল উইংয়ের অবস্থান ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ইপিআর সদস্য ছিলেন সেখানে। ২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। এতে অনেক ইপিআর সদস্য শহীদ হন। কিছু পালাতে সমর্থ হন। বাদবাকি সবাই বন্দী হন।
আবুল হোসেন পিলখানা থেকে পালাতে সমর্থ হন। এরপর তিনি বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে নিজ এলাকায় যান। সেখানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। পরে যুদ্ধ করেন নির্ভয়পুর সাবসেক্টরে।
১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট হাসনাবাদে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক গেরিলাযুদ্ধে মো. আবুল হোসেন শহীদ হন। হাসনাবাদ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত।
আবুল হোসেন একটি গেরিলাদলের সঙ্গে ছিলেন। এই দলের অবস্থান ছিল হাজীগঞ্জে। দলনেতা ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হাসনাবাদে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অ্যামবুশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলে ছিলেন আবুল হোসেন। ২৮ আগস্ট ভোরে তাঁরা হাসনাবাদ বাজারের কাছে গোপনে অবস্থান নেন।
সকাল নয়টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। একটু পর তাঁরা মানুষের চিত্কার ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। তখন মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক হয়ে যান।
এর ৮-১০ মিনিটের মধ্যেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ভেতর ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে ছিল অনেক রাজাকার। ৪০-৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শুরু হলো প্রচণ্ড আক্রমণ।
মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশাহারা। তারা না পারছে পজিশন নিতে, না পারছে গুলি করতে। কারণ, তারা এসেছে নৌকায় করে। ১০-১২টি নৌকা। ৫-৭ মিনিট মুক্তিযোদ্ধারা একতরফা আক্রমণ চালালেন। নৌকায় শুধু চিত্কার ও কান্নার শব্দ।
এরপর পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। পাকিস্তানি সেনাদের দূরবর্তী অবস্থান থেকেও গোলা এসে সেখানে পড়তে থাকল। তারা খবর পেয়ে গোলাবর্ষণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখলেন। আবুল হোসেনও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মিলে ৯-১০ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যেই নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজে ফিরতে চায় বিএনপি
-
ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার গ্রুপ কেমন হলো, তাদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু
-
ফিনল্যান্ড: বরফের দেশে স্বাধীনতার উষ্ণতা
-
পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি
-
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার তারিখ আরও পেছাচ্ছে