বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবুল হাসেম, বীর প্রতীক
গ্রাম চর ফকিরা, ইউনিয়ন চাপরাশির হাট, উপজেলা কবিরহাট, নোয়াখালী।
বাবা আলী আজম। স্ত্রী আরবের নেছা। তাঁদের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৬৫।
মৃত্যু ২০১১।
সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আবুল হাসেম ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। তাঁদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা তখন দিশেহারা। ঘণ্টা দেড়েক পর পাকিস্তানি সেনারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সে সুযোগ দিলেন না। এ ঘটনা ঘটেছিল কানাইঘাটে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
কানাইঘাট সিলেট জেলার অন্তর্গত। কানাইঘাটে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী এই প্রতিরক্ষা অবস্থান দখলের দায়িত্ব ছিল নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘জেড’ ফোর্সের ওপর। শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সেই দায়িত্ব বর্তায়।
১ ডিসেম্বর ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল একযোগে কানাইঘাটে অভিযান শুরু করে। একটি দল দরবস্ত-কানাইঘাট সড়কে আর অন্য দলটি কাট অফ পার্টি হিসেবে অবস্থান নেয় চরঘাট-কানাইঘাট সড়কে। ফলে দুই দিক থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাহায্য আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। দুটি দলই একযোগে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীর ওই দলে ছিলেন আবুল হাসেম।
২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা যে যার নির্দিষ্ট অবস্থানে চলে যান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ওপর শুরু করে আর্টিলারির ব্যাপক গোলাবর্ষণ। বিরামহীন গোলাবর্ষণ উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগিয়ে যান। সকাল হওয়ার আগেই তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। দেড় ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের সে সুযোগ দেননি।
আনুমানিক সকাল সাতটা। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণ তখনো অব্যাহত। ১৫ মিনিট পর তাঁরা শত্রুপক্ষের ঘাঁটির ওপর সরাসরি আক্রমণ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে অধিকাংশ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। বাদবাকি কিছু সৈন্য পালিয়ে সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাদের শরীর। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই মুক্ত হয় কানাইঘাট। এই যুদ্ধে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ১১ জন শহীদ ও ২০ জন আহত হন। এই যুদ্ধে আবুল হাসেম অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। তিনি চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৪ নম্বর সেক্টরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
বন্দর ইজারার কাজ বন্ধ না করলে অবরোধ-ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি স্কপের
-
বিশ্বকাপের ড্র : বিনোদন ও শান্তি পুরস্কারের পর্ব শেষে মূল ড্র অনুষ্ঠান শুরু
-
চোখের সামনে সঙ্গীদের মেরে আমাদের ভয় দেখাত
-
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় থাকতে পারে ৩০টির বেশি দেশ
-
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার