বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবুল বশার, বীর প্রতীক
গ্রাম চন্দ্রদিঘলিয়া, সদর উপজেলা, গোপালগঞ্জ।
বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা আঞ্জুমান নেছা। স্ত্রী সাহেদা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১১৭। গেজেটে নাম আবুল বাশার।
মৃত্যু ২০০০।
জঙ্গলের ভেতরে আবুল বশাররা বিশ্রামে। তবে সতর্ক অবস্থায়। কেউ ঘুমিয়ে, কেউ জেগে। সবাই একসঙ্গে ঘুমাননি। পালা করে ঘুমাচ্ছেন। ভোর হয় হয়। এ সময় আবুল বশারদের অবস্থানে আকস্মিক আক্রমণ চালায় একদল পাকিস্তানি সেনা। শান্ত এলাকা হঠাত্ তীব্র গোলাগুলিতে প্রকম্পিত। শত্রুর আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা হকচকিত। তবে দ্রুত তাঁরা নিজেদের সামলিয়ে নেন। যে যেভাবে পারেন, পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা শুরু করেন।
আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনারা ছিল বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য। জীবনের মায়া তাদের ছিল না। মরিয়া মনোভাব নিয়ে তারা আক্রমণ করে। এ রকম অবস্থায় সম্মুখযুদ্ধ ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। আবুল বশারসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। কিন্তু বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ব্যর্থ হন। ফলে তাঁরা চরম নাজুক অবস্থায় পড়েন।
শহীদ ও আহত হন আবুল বাশারের কয়েকজন সহযোদ্ধা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান (মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত) শহীদ হন। পরবর্তী অধিনায়কও (লিয়াকত আলী খান বীর উত্তম) গুরুতর আহত হন। এতে বশার দমে যাননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে তিনিও গুরুতর আহত হন।
পরে লেফটেন্যান্ট ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক, পরে মেজর) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল এসে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তীব্র পাল্টা আক্রমণ চালায়। যুদ্ধের গতি ক্রমশ মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তে আসে। পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে হটে তাদের মূল অবস্থানে ফিরে যায়। সিলেট জেলার কানাইঘাটের গৌরীপুরে এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা। যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে সিলেট অভিমুখে অভিযান শুরু করেন। তাঁরা প্রথমে চারগ্রাম দখল করেন। এরপর জকিগঞ্জ দখল করে কানাইঘাট দখলের জন্য ২৩-২৪ নভেম্বর গৌরীপুরে সমবেত হন। এর দুই মাইল দূরে কানাইঘাট ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা।
২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী (৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট) তাদের মূল ডিফেন্সিভ পজিশন ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে হঠাত্ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। এতে নাজুক অবস্থায় পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আলফা কোম্পানি। এই কোম্পানিতে ছিলেন আবুল বশার।
আবুল বশার চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই: তারেক রহমান
-
শিল্পকলার সামনে নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশে ছুড়ে মারা হলো ডিম
-
তিনি তো আমির হোসেন আমুর আইনজীবী নন
-
আমস্টারডামে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা, দুই দেশের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
-
আসিফ নজরুলের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণে’ তারেক রহমানের নিন্দা