বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবিদুর রহমান, বীর বিক্রম
গ্রাম সলিমাবাদ, উপজেলা নাগরপুর, টাঙ্গাইল।
বাবা শফিকুর রহমান, মা আনোয়ারা বেগম। স্ত্রী হামিদা রহমান। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৩২।
মৃত্যু ২০১০।
গোপন ক্যাম্প থেকে সহযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোদের নিয়ে আবিদুর রহমান বেরিয়ে পড়লেন। আবছা আলো-অন্ধকারের মধ্য দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে পৌঁছালেন নদীর পাড়ে। অবস্থান নিলেন সারিবদ্ধ দোকানের পেছনে। অদূরে নৌবন্দর। সেখানে তীব্র আলো। সেই আলোর কিছুটা তাঁরা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানেও পড়েছে। আলো-আঁধারির মধ্যে তাঁরা দ্রুত অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। এ সময় ঘটল এক বিপত্তি। দলনেতা আবিদুর রহমান কৌশলে সেই বাধা উপেক্ষা করে অপারেশন সফল করলেন। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৬ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরের এ ঘটনা ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে একযোগে অপারেশন চালিয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই অপারেশনের সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।
নির্ধারিত দিন আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জন নৌ-কমান্ডো গোপন ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরের অপর পাড়ে অবস্থান নেন। ১৫ জন নদীতে নেমে অপারেশন করেন। দলনেতা আবিদুর রহমানসহ পাঁচজন থাকেন স্থলভাগের নিরাপত্তায়।
১৫ জনের দলটি তিনজন করে পাঁচটি দলে বিভক্ত ছিল। তিনটি দল পানিতে নামার পর সেখানে হঠাত্ এক অস্ত্রধারী রাজাকার এসে হাজির হয়। নৌ-কমান্ডোরা তাকে গুলি করে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে তখন তা করা সম্ভব ছিল না। কারণ কাছাকাছিই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। এদিকে ওই রাজাকার সেখান থেকে আর সরছিল না। এ অবস্থায় দলনায়ক আবিদুর রহমান ওই রাজাকারকে নিঃশব্দে আটক করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ছুরি হাতে একাই ক্রল করে ওই রাজাকারের কাছে গিয়ে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার ওপর। আবিদুর রহমান রাজাকারের রাইফেলটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে বন্দী করেন। এরপর নৌ-কমান্ডোদের বাকি দুটি দল পানিতে নামে।
যে তিনটি দল আগে পানিতে নেমেছিল তাঁরা যে যাঁর টার্গেটে (জাহাজ, পন্টুন বা টাগ) মাইন লাগান। পরের দুটি দলও নির্দিষ্ট টার্গেটে মাইন লাগাতে সক্ষম হয়। তারপর তাঁরা দ্রুত ফিরে আসেন আগের স্থানে। একটু পর শুরু হয় বিস্ফোরণ। বন্দরের সমুদয় জলরাশি ও দুই পাড় কেঁপে পর পর ১৫টি মাইন বিস্ফোরিত হয়।
আবিদুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে সাবমেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ১২ জন বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁদের মধ্যে আবিদুর রহমানসহ আটজন ৩১ মার্চ তুলন থেকে পালিয়ে যান। কয়েক দিন পর ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আবিদুর রহমান ১৬ আগস্টের পর আরও কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারাবো ফেরিঘাট, সিদ্ধিরগঞ্জে খাদ্যগুদামে আক্রমণ, রসদবাহী জাহাজ ‘তুরাগে’ আক্রমণ প্রভৃতি।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ট্রাম্প ৯০, কমলা ২৭
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ