বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবদুল হাকিম, বীর প্রতীক

  • গ্রাম মোহাম্মদপুর, উপজেলা হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • বাবা ফয়েজউল্লাহ মোল্লা, মা অজুফা খাতুন। স্ত্রী জোবেদা বেগম। তাঁদের এক মেয়ে ও পাঁচ ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৫৫।

  • মৃত্যু ১৯৯৪।

আবদুল হাকিম

মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর সেক্টর সদর থেকে স্বল্প প্রশিক্ষিত গেরিলা যোদ্ধাদের যাঁদের বাড়ি যে এলাকায়, তাঁদের সে এলাকায় পাঠানো হতো। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ নম্বর সেক্টর থেকে একদল মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয় নরসিংদী ও গাজীপুর জেলায়। তাঁরা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল হাকিম। তাঁরা দুঃসাহসিক কিছু অপারেশন চালান।

১৯৭১ সালে কালিয়াকৈরের বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান। গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কালিয়াকৈর উপজেলা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের অবস্থান ছিল পুরাতন থানা কমপ্লেক্সে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এর অবস্থান। তাদের সহযোগী ছিল একদল রাজাকার। ২২ অক্টোবর সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা এক অপারেশন পরিচালনা করেন। সেদিন রাত আনুমানিক ১০টায় আবদুল হাকিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা চাপাইর ব্যাপারীপাড়া হাইস্কুল থেকে তুরাগ নদ অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনা দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালান। এতে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হকচকিত অবস্থা কাটিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

এরপর দুই পক্ষে ব্যাপক পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে যুদ্ধ চলে। আবদুল হাকিম ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা ব্যর্থ হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে ও বিপুল রসদে সজ্জিত ছিল। তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের রসদ ছিল কম।

রাত সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি প্রায় শেষ হয়ে যায়। তখন পাকিস্তানিরা বেশ আধিপত্য বিস্তার করে। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানিদের পক্ষে চলে যায়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। অবশেষে রাত চারটার দিকে তাঁরা পিছু হটে যান। তবে তাঁদের আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এবং রাজাকার দলের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা পরে খবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের আক্রমণে পাঁচজন রাজাকার ও ছয়জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। আক্রমণের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সঠিক নিশানায় পড়ে। বিস্ফোরণে দুটি বাংকার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মাত্র দু-তিনজন আহত হন।

আবদুল হাকিম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশ ইউনিটে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। এপ্রিলে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাঁকে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গাজীপুর জেলায় পাঠানো হয়। কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর এবং নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান