বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবদুল হক, বীর বিক্রম

  • গ্রাম মুছাপুর, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম।

  • বাবা মোহাম্মদ সুকানী, মা সাহেরা খাতুন। স্ত্রী খতিজা বেগম। তাঁদের ছয় ছেলে ও এক মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৫৬।

  • মৃত্যু ১৯৮৭।

আবদুল হক

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বারবার আক্রমণ করেও মুক্ত ভূখণ্ড দখল করতে ব্যর্থ হলো। তারা বারবার আক্রমণ করছে একটি কারণে। আর তা হলো ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের আগেই মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা দখল করে সেখানে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে যায়।

১৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার আক্রমণ চালায়। আবদুল হকসহ নতুন মুক্তিযোদ্ধারা যে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন, সেখানেই পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করে। ফলে সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২১, ২৪ ও ২৬ সেপ্টেম্বর আবার সেখানে আক্রমণ করে। এর মধ্যে ২১ ও ২৪ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ ছিল ভয়াবহ। বহুসংখ্যক গানবোট, স্টিমার ও লঞ্চ নিয়ে তারা সোনাভরি নদীর মোহনা হয়ে অগ্রসর হয়। ব্যাপক ফায়ার সাপোর্টের সাহায্য নিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে উঠে পড়ার চেষ্টা করে। আবদুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন। এ ঘটনা কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীতে। ১৯৭১ সালে রৌমারী থানা (বর্তমানে উপজেলা) মুক্ত ছিল।

এই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমদের (বীব বিক্রম, পরে মেজর) ১৯৭৩ সালের বয়ানে। তিনি বলেন, ‘...১৬ সেপ্টেম্বর “সি” (চার্লি) কোম্পানি ও “এ” (আলফা) কোম্পানির একটি প্লাটুন লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে রৌমারীর চরের কোদালকাঠিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়। ২১ সেপ্টেম্বর শত্রুর দুই কোম্পানি সেনা মর্টারের সাহায্যে চরকোদাল আক্রমণ করে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে তাদের আক্রমণ ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় ৩৫ জন নিহত হয়। আমাদের পক্ষে পাঁচজন আহত হয়।

‘২৪ সেপ্টেম্বর সকালবেলা শত্রুপক্ষ পুনরায় এক ব্যাটালিয়ন সেনা নিয়ে কোদালকাঠি আক্রমণ করে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এবারেও তাঁদের ব্যর্থ করে দেয়। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় ৭০ জন নিহত হয়। আমাদের ১৫ জন আহত হয়। কোদালকাঠি যুদ্ধে...ল্যান্স নায়েক আবদুল হক প্রমুখ অপূর্ব বীরত্ব প্রদর্শন করেন এবং সাহসিকতার জন্য বীর বিক্রম পদকপ্রাপ্ত হন।’

আবদুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। ৩০ মার্চ তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বৃহত্তর সিলেটের ধলই, এমসি কলেজসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সাহসের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান