বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবদুল লতিফ, বীর প্রতীক
গ্রাম মহেষপুর, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা লিল মিয়া, মা গোলাপী খাতুন। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ৯২।
শহীদ ২৩ অক্টোবর ১৯৭১।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার সীমান্তরেখায় সালদা নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। অদূরেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
সালদা নদীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্থায়ী কোনো ঘাঁটি ছিল না। নদীর পূর্ব পার মন্দভাগ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। নদীর অপর পার মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে না থাকলেও তা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কাছাকাছি চাঁদলা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। মাঝেমধ্যেই তারা সেখান থেকে সালদা নদীর পাড়ে আসত। অস্থায়ীভাবে সেখানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নজরদারির চেষ্টা করত। তখন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করতেন, যাতে তারা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান না করতে পারে। কারণ, সালদা নদী ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পথ।
২১ বা ২২ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্টের একটি বড় দল সালদা নদীর অপর পাড়ে সমবেত হয়। তারা সেখানে বাংকার খনন করতে থাকে। এর কয়েক দিন আগে থেকেই তারা মন্দভাগ দখলের চেষ্টা করছিল। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক ধারণা করলেন, পাকিস্তানি সেনারা যেকোনো সময় মন্দভাগ আক্রমণ করতে পারে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিলেন তা প্রতিহত করতে।
নির্দেশ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত প্রস্তুত হলেন। তাঁরা ছিলেন তিনটি দলে বিভক্ত। একটি দলে ছিলেন আবদুল লতিফ। ২৩ অক্টোবর রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ২৪ অক্টোবর) মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সালদা নদী রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে পাহাড়ি এলাকায়, একটি দল সালদা নদী ও গুদামঘরের পশ্চিমে নদী অতিক্রম করে এবং অপর দল পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে অবস্থান নেয়। তারপর তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাঁড়াশি আক্রমণ করেন। তখন সেখানে ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
আবদুল লতিফ ছিলেন নদী অতিক্রমকারী দলে। তাঁরা সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকটি বাংকার ধ্বংস করেন। এরপর তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছিলেন সামনে। তখন হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন।
আবদুল লতিফ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। তখন তাঁর রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসে এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সদস্য সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ ও সালদা নদী সাবসেক্টরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর, ‘সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ
-
আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে কী বললেন নাহিদ, আখতার, হাসনাত ও সারজিস
-
বিপিএল: শুরুর আগেই রীতিমতো ‘সার্কাস’
-
মঞ্চে নির্ধারিত চেয়ারে না বসে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলেন তারেক রহমান