বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবদুল মান্নান, বীর বিক্রম
গ্রাম নোয়াগাঁও, ইউনিয়ন শ্যামগ্রাম, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা আবদুল লতিফ, মা রাবেয়া খাতুন। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৬ ।
শহীদ ৬ অক্টোবর ১৯৭১।
রাতে আবদুল মান্নানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা রওনা হলেন তাদের লক্ষ্যস্থল অভিমুখে।
সবার আগে একজন পথপ্রদর্শক। তাঁর পেছনে দলনেতা ও আবদুল মান্নান। তাঁদের পেছনে সহযোদ্ধারা। তাঁদের কাছে ভারী অস্ত্র মাত্র দুটি। একটি আরএল (রকেট লঞ্চার) ও একটি এলএমজি। অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এসএমজি, স্টেনগান, রাইফেল এবং কয়েকটি হ্যান্ড গ্রেনেড।
সেদিন তাঁরা মদুনাঘাট বিদ্যুেকন্দ্রে (সাবস্টেশন) আক্রমণ করেন। চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত মদুনাঘাট। সাবস্টেশনের অবস্থান চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের উত্তর পাশে এবং হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই বিদ্যুেকন্দ্রে ছিল পাকিস্তানি সেনা ও কিছু রাজাকার। সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। সাবস্টেশনের চারদিকে ছিল বাংকার।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক অবস্থান ছিল মদুনাঘাটের অদূরেই। এর আগে তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় রেকি করেন। নির্ধারিত দিন মধ্যরাতে তাঁরা কেন্দ্রের ৫০-৬০ গজ দূরে অবস্থান নেন। রাত যখন তিনটা, তখন তাঁরা আরএল দিয়ে বিদ্যুেকন্দ্রে কয়েকটি রকেট ছোড়েন। নির্ভুল নিশানায় সেগুলো আঘাত হানে। তিনটি ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে যায়।
পাকিস্তানি সেনারা সজাগই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। চারদিকের বাংকার থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও জোর আক্রমণ চালায়। গুলির খই ফোটে বিদ্যুেকন্দ্রে। আবদুল মান্নান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করে চলেন।
তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে আবদুল মান্নান হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বুকে কয়েকটি গুলি লাগে। শহীদ হন তিনি। সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তিনি শহীদ ও দলনেতা সুলতান মাহমুদ (বীর উত্তম)-সহ তিন-চারজন আহত হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবরের।
মদুনাঘাট বিদ্যুেকন্দ্র ধ্বংসের অপারেশন ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। এই অপারেশনের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ বিদেশি বেতার ও সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচার পায়। অবশ্য এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে আবদুল মান্নান শহীদ হন।
সহযোদ্ধারা আবদুল মান্নানের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও সমাহিত করতে পারেননি। স্থানীয় গ্রামবাসী মরদেহ ওই গ্রামেই সমাহিত করেন।
আবদুল মান্নান পুলিশে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ১ নম্বর সেক্টরের ঋষিমুখ সাবসেক্টরে। বিভিন্ন জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধ বা অপারেশনেই তিনি পুরোভাগে থাকতেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
প্রথম দিনেই বাইডেনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাতিলের ঘোষণা ট্রাম্পের
-
নতুন সব বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’, উচ্চশিক্ষার দুরবস্থা তুলে ধরলেন তানজীমউদ্দিন খান
-
মেডিকেলে ভর্তিতে কোটায় উত্তীর্ণদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই হবে, সে পর্যন্ত তাঁদের ভর্তি স্থগিত
-
নেইমারের সৌদি ‘প্রেমে’ ছ্যাঁকা, তাহলে কি শিকড়ে ফিরছেন
-
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু পেপারে পাঁচ মিনিট ধরে চিঠি লিখলেন দীপু মনি