বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবদুল বাতেন, বীর প্রতীক
গ্রাম ছিটলক্ষ্মণপুর রাধানগর, ইউনিয়ন রামনাথপুর, উপজেলা বদরগঞ্জ, রংপুর।
বাবা আবদুল কুদ্দুস সরকার, মা রাহেলা বেগম। স্ত্রী সাজেদা বেগম। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৩১।
মৃত্যু ২০০৭।
সকাল থেকে আবদুল বাতেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অবস্থানগত এলাকা ঘিরে শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড যুদ্ধ। নায়েক শহীদ মেশিনগানম্যান। বাতেন তাঁর সহকারী। তাঁরা দুজন মেশিনগান দিয়ে অবিরাম গুলি করতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে। মেশিনগানের গুলিতে থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা।
এ ঘটনা ঘটে ছাতকে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। ছাতক সিলেট জেলার অন্তর্গত। সুরমা নদীর তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। নদীর পশ্চিম তীরে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। ছাতক শহর ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ঘিরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা।
১৪ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ছাতকে আক্রমণ করেন। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। কাট অফ পার্টিতে ছিলেন আবদুল বাতেন। তাঁর দলের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট এস আই এম নূরুন্নবী খান (বীর বিক্রম, পরে লে. কর্নেল)। তাঁরা ছাতকের অদূরে হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান নেন, যাতে ওই দিক দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ছাতকের অবস্থানে কোনোভাবেই রিইনফোর্সমেন্ট করতে না পারে।
এই যুদ্ধের ঘটনা শোনা যাক মুক্তিযোদ্ধা এস আই এম নূরুন্নবী খানের ভাষ্য থেকে। তিনি বলেন, ‘১৪ অক্টোবর ১৯৭১। তখন সকাল ৯টার মতো হবে। পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে প্রতীক্ষিত প্রথম আক্রমণটি এসে গেল। উত্তর কালারুখা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের সুপারিবাগানে ওদের একত্র হতে দেখলাম। দেখতে না দেখতেই পাকিস্তানি সেনারা অ্যাসল্ট লাইন করে আমাদের অবস্থানের দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসতে লাগল। নায়েক শহীদের মেশিনগান অবস্থানটি ছিল আমার পাশেই। তাঁর সহকারী ছিল আবদুল বাতেন। শহীদকে মেশিনগানের গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিলাম। অন্যান্য সব অবস্থান থেকেও একযোগে গুলি ছোড়া শুরু হলো।
‘পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা থেমে গেল। অনেকগুলো লাশ মাঠে ফেলে রেখে ওরা পেছনে হটে গেল। সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা পুনরায় আক্রমণের চেষ্টা চালাল। এভাবে সারা দিন তারা অন্তত পাঁচ/ছয় বার আমাদের অবস্থানে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণগুলো ছিল ভয়াবহ ধরনের। দু-তিনটি আক্রমণ নায়েক শহীদ ও আবদুল বাতেন প্রতিহত করেন। তাঁদের বীরত্বে আমরা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাই।’
আবদুল বাতেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চের প্রথম দিকে তাঁদের বেশির ভাগকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তবে তিনি হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানির সঙ্গে সেনানিবাসে ছিলেন। ৩০ মার্চ তাঁরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি যুদ্ধ করেন দিনাজপুর ও সিলেট জেলায়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
জামিনে ছাড়া পেয়েই অপরাধে জড়িত, কিশোরকে অপহরণ
-
কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
-
পাবনায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা
-
ধোনি-ঝড়ের পরও চেন্নাইয়ের বিদায়, শেষ চারে কোহলির বেঙ্গালুরু
-
ময়নাতদন্তে হত্যাকাণ্ড, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা