বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবদুল গফুর, বীর প্রতীক

  • গ্রাম ছয়ানী টগবা (লামচর সরদারবাড়ি), নোয়াখালী।

  • বাবা বশির উল্লাহ সরদার, মা বদরের নেছা। স্ত্রী সাফিয়া খাতুন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ২১০। গেজেটে নাম আবদুল গাফফার।

  • শহীদ ৮ আগস্ট ১৯৭১।

আবদুল গফুর

চুয়াডাঙ্গা জেলার দক্ষিণ প্রান্তে ধোপাখালী বিওপি দামুড়হুদা উপজেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিবাহিনীর একটি দল ৮ আগস্ট এখানে আক্রমণ করে। এ দলে ছিলেন আবদুল গফুর। গফুরসহ এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই ইপিআর সদস্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন দুপুরের পর ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমানের (বীর বিক্রম, পরে জেনারেল ও সেনাপ্রধান) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প থেকে রওনা হন। সন্ধ্যার আগে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে আক্রমণ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই আক্রমণের সংবাদ পাকিস্তানি সেনারা তাদের বাঙালি দোসরদের মাধ্যমে আগেই পেয়ে যায়। তারা সুরক্ষিত বাংকারে অবস্থান নিয়ে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে অনবরত গোলাবর্ষণ করতে থাকে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা তোলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার হাতে অস্ত্র বলতে পুরোনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেওয়া এসএলআর ও স্টেনগান। মাত্র কয়েকজনের কাছে উন্নত অস্ত্র। তাঁরা চরম প্রতিকূলতার মধ্যেই বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। কয়েকজন এ যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব দেখান। আবদুল গফুর গুলি করতে করতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছাকাছি চলে যান। তাঁর সামনেই শহীদ হন দুই সহযোদ্ধা। এতে তিনি দমে যাননি। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। হঠাৎ গুলি এসে লাগে আবদুল গফুরের বুকে। তিনি শহীদ হন।

ধোপাখালী ছিল মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের অধীন এলাকা। এখানকার পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের কারণে মুক্তিবাহিনীর গণযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা কার্যক্রম চালাতে পারছিলেন না। ফলে ওই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাদের সেখান থেকে বিতাড়ন বা তাদের পরিধি সীমিত করার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনী। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আবদুল গফুর, রশিদ আলী (বীর প্রতীক, সিলেট), আবু বাকের (যশোর), সিদ্দিক আলী ও আবদুল আজিজ (বৃহত্তর ঢাকা) শহীদ হন এবং চারজন গুরুতর আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা আবদুল গফুর, রশিদ আলীসহ চারজনের মরদেহ যুদ্ধস্থল থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পরে বাংলাদেশের মাটিতে ধোপাখালীর পার্শ্ববর্তী জীবননগরে তাঁদের সমাহিত করা হয়।

আবদুল গফুর ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন ৪ নম্বর উইংয়ে। তাঁর দলের সঙ্গে তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে তাঁদের পুনঃসংগঠিত করা হয়। এরপর তাঁরা বানপুর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান