বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবদুল গফুর, বীর প্রতীক

  • গ্রাম রাজপাট (পশ্চিমপাড়া), কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ।

  • বাবা হাতেম মোল্লা, মা সাজু খাতুন।

  • স্ত্রী মমতাজ বেগম। তাঁদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৮৮।

আবদুল গফুর

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সিলেটের চারগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। আবদুল গফুর এ যুদ্ধে অংশ নেন। নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো কোম্পানি আটগ্রাম-চারঘাট-সিলেট অক্ষ ধরে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করলে সেদিন চারগ্রামে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ব্রাভো কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড গোলাগুলি উপেক্ষা করে সেখানকার ঘাঁটির ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং ২০ জন পাকিস্তানি সেনাকে তাঁরা বন্দী করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বাকি সেনারা পালিয়ে যায়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পাঁচজন আহত হন। আটগ্রাম যুদ্ধে আবদুল গফুর অসীম সাহস দেখান।

আবদুল গফুর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই রেজিমেন্টকে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে বদলি করা হয়। সে কারণে তাঁদের বেশির ভাগ ছুটিতে এবং বাকিরা যশোরের চৌগাছায় শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। আবদুল গফুরও তখন প্রশিক্ষণরত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রশিক্ষণরত সেনাদের সেনানিবাসে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২৯ মার্চ গভীর রাতে তাঁরা সেনানিবাসে ফিরে আসেন। পরদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ রেজিমেন্ট ও ২২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স তাঁদের আক্রমণ করে। তখন তাঁরা প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তাঁরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে চৌগাছায় একত্র হন এবং ক্যাপ্টেন হাফিজের (হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম, পরে মেজর) নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাঁরা ভারতে যান।

ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর আবদুল গফুর প্রথম যুদ্ধ করেন জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে। ৩০-৩১ জুলাইয়ে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরপর তাঁরা সিলেট এলাকায় চলে আসেন। তিনি সিলেট এলাকায় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো কোম্পানির অধীনে আটগ্রাম, কানাইঘাট, এমসি কলেজসহ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সম্মুখযুদ্ধে আবদুল গফুর যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দেন।

আবদুল গফুর ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান