বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

আবদুল খালেক, বীর প্রতীক

  • গ্রাম পূর্ব বাতাবাড়িয়া, ইউনিয়ন খিলা, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা।

  • বাবা আমিনউদ্দিন ভূঁইয়া, মা নূরজাহান বিবি। স্ত্রী আছিয়া খাতুন। তাঁদের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১৩২।

  • মৃত্যু ১৯৯৭।

আবদুল খালেক

সালদা নদীর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের খুব কাছাকাছিই ছিল মুক্তিবাহিনীর গোপন অগ্রবর্তী স্ট্যান্ডিং প্যাট্রোল পার্টি। এ দলের সদস্য ছিলেন আবদুল খালেক। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তত্পরতা লক্ষ করতেন। মাঝেমধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে আবার চলে যেতেন তাঁদের গোপন অবস্থানে। ১৯৭১ সালের আগস্টের শেষ থেকে এভাবে তাঁরা বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন চালান। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তাঁদের সন্ধান পেয়ে যায়। ২৫ সেপ্টেম্বর একদল পাকিস্তানি সেনা তিন দিক থেকে তাঁদের আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। শুরু হয় যুদ্ধ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত সালদা নদী। সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে সালদা রেলস্টেশন দিয়ে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ। এ কারণে ১৯৭১ সালে সালদা নদী ও সালদা রেলস্টেশন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। বিভিন্ন জায়গায় ছিল তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করতেন। সেখানে যুদ্ধ ছিল তখন নিয়মিত ঘটনা।

সেদিন সামগ্রিক পরিস্থিতি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে ছিল না। তার পরও তাঁরা প্রাণপণে যুদ্ধ করতে থাকেন। আবদুল খালেক ও তাঁর সহযোদ্ধারা সীমিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়েই পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রাভিযান প্রতিহত করেন। হঠাৎ গুলি এসে লাগে তাঁর মাথা ও বুকে। কয়েকটি শেলের টুকরাও লাগে তাঁর গায়ে। কাছাকাছি থাকা এক সহযোদ্ধা তাঁকে নিয়ে যান পেছনে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ভর্তি করা হয় আগরতলার এক হাসপাতালে। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় লক্ষ্ণৌর হাসপাতালে। তিনি সেখানে চিকিত্সাধীন থাকা অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।

১৯৭১-এ আবদুল খালেক পাকিস্তান ইউনাইটেড ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যুদ্ধ করেন কসবা, মন্দভাগ, কইখোলা, নয়নপুরসহ আরও কয়েকটি জায়গায়।

স্বাধীনতার পর কয়েক মাস পরিবারের লোকজন আবদুল খালেকের সন্ধান পাননি। বাড়ির লোকজন ধরে নিয়েছিলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। চিকিত্সাশেষে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ মাস পর বাড়ি ফেরেন তিনি। তারপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চিকিত্সা নেওয়ার পরও শরীরে থাকা শেলের টুকরা ও গুলির কারণে তাঁর শারীরিক সমস্যা থেকেই যায়। চিকিত্সা করেও লাভ হয়নি। পরে দুটি পা-ই হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান