বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আবদুর রব চৌধুরী, বীর বিক্রম
গ্রাম নোয়াখোলা, উপজেলা চাটখিল, নোয়াখালী।
বাবা আকরাম উদ্দিন চৌধুরী, মা আকরামজান বানু। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁর তিন মেয়ে ও তিন ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৬৩।
শহীদ ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ২১ নভেম্বর ফেনী জেলার অন্তর্গত বেলুনিয়ার বেশির ভাগ এলাকা মুক্ত হয়। তারপর আবদুর রব চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হন ফেনী অভিমুখে। তাঁরা প্রথমে বিলুনিয়ার মুখবরাবর বান্দুয়া-পাঠাননগরে অবস্থান নিয়ে ওই এলাকা অবরোধ করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল মিত্রবাহিনীর জাঠ ও মারাঠা রেজিমেন্টের সেনারা।
পাঠাননগর-বান্দুয়া ছিল সীমান্ত এলাকা। মিত্রবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল সীমান্তে ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী সামরিক যানবাহনের সরব চলাচল ও সেনাসমাবেশের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিস্মিত করা, যাতে তারা হকচকিত হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মিত্রবাহিনীর জাঠ রেজিমেন্টের সেনারা পশ্চিম সীমান্ত ও মারাঠা রেজিমেন্টের সেনারা পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে।
কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর অবস্থান বুঝে ফেলে। তারা দ্রুতগতিতে ফেনীর উত্তরে বিলুনিয়ার মুখবরাবর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করে। এ ছাড়া ছাগলনাইয়া-ফেনীর মাঝামাঝি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত আরেক প্রতিরক্ষা। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান।
পাকিস্তানি সেনারা ওই এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। দুই পক্ষে গুলি-পাল্টাগুলি এবং থেমে থেমে কয়েক দিন যুদ্ধ চলে। কখনো পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধা বা মিত্রবাহিনীর অবস্থানে ঝটিকা আক্রমণ চালায় আবার কখনো মুক্তিযোদ্ধা বা মিত্রবাহিনীর সেনারা। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ওই এলাকায় প্রচণ্ড পাল্টাপাল্টি যুদ্ধ হয়।
আবদুর রব চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি উপদলের দলনেতা। ৫ ডিসেম্বর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালান। তখন সেখানে দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলাবস্থায় হঠাত্ তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া একঝাঁক (ব্রাশফায়ার) গুলির পাঁচটি গুলি লাগে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ।
আহত হয়েও আবদুর রব চৌধুরী দমে যাননি। প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকেই নেতৃত্ব দিতে থাকেন। সহযোদ্ধারা অনুরোধ করা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। কিন্তু একসময় অধিক রক্তক্ষরণে তিনি নেতিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত নিয়ে চলেন চিকিত্সকের কাছে। কিন্তু পথেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।
আবদুর রব চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইএমই কোরে চাকরি করতেন। তাঁর ইউনিটের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। পদবি ছিল নায়েক। মার্চ মাসে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে গিয়ে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়: ডোনাল্ড লু
-
ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী
-
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেমড সেলে না রাখার রায় স্থগিত
-
সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে যে ‘উপহার’ দিতে চান নাজমুল
-
যমজ বোন হলেও নাচে তাঁরা ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী