বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আফসার আলী, বীর বিক্রম
গ্রাম জালাগারি, ইউনিয়ন মহদিপুর, উপজেলা পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
বাবা কবেজ আলী। মা আছিয়া বেওয়া। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ৫৫।
শহীদ ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। গেজেটে শহীদ লেখা হয়নি।
সিলেট শহরের উপকণ্ঠে এমসি কলেজের পাশে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, আফসার আলীসহ এক দল মুক্তিযোদ্ধা এই প্রতিরক্ষার মুখোমুখি হন। তাঁরা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। তিনি ছিলেন ‘ডি’ দলে। আর এই দলটি ছিল একদম সামনে। পাকিস্তানিদের নাকের ডগায় পরিখা (ট্রেঞ্চ) খনন করে তাঁরা অবস্থান নেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদেরই লোক ভেবে পাকিস্তানি সেনারা নির্বিকার থাকে। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক ও হেলমেট ছিল পাকিস্তানিদের মতোই। এ ছাড়া পেছনে ও বাঁ দিকে খাদিমনগরে তখন যুদ্ধ চলছিল। এত তাড়াতাড়ি মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে উপস্থিত হবেন, পাকিস্তানিরা কল্পনাও করেনি। তারা কেউ কেউ চিত্কার করে পরিচয় জানতে চায়। আফসার আলীরা জবাব না দিয়ে নীরব থাকেন।
এ সময় সেখানে সামনের রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি গানবাহী পিকআপ ও দুটি জিপের কনভয় থামে। সেটা দেখে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের আর নিবৃত্ত করতে পারেননি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করেন। একটি জিপে আগুন ধরে যায়। তখন পাকিস্তানি সেনারা সন্দিহান এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছোটাছুটি করে। এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা মেশিনগান, হালকা মেশিনগানসহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন।
এতে তাত্ক্ষণিকভাবে ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। একটু পর পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ করে। নিমেষে সেখানে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানিরা সর্বশক্তি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আফসার আলীরা বিপুল বিক্রমে পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তিনি অসাধারণ সাহসের পরিচয় দেন। মুখোমুখি যুদ্ধের একপর্যায়ে একঝাঁক গুলি ছুটে আসে তাঁর দিকে। কয়েকটি গুলি লাগে তাঁর দেহে। শহীদ হন তিনি।
সেদিন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আফসার আলীসহ ২০ জন শহীদ ও ২১ থেকে ২২ জন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৭০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও রণনৈপুণ্যের কাছে পাকিস্তানিরা শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে কিছু আত্মসমর্পণ এবং বাকিরা শহরের দিকে পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে শহীদ আফসার আলীর মরদেহ সহযোদ্ধারা সমাহিত করেন শাহজালাল মাজারসংলগ্ন এলাকায়। তাঁর সমাধি চিহ্নিত।
আফসার আলী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে জেড ফোর্সের অধীনে ধলই বিওপি, আটগ্রাম, কানাইঘাটের গৌরীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
তারেক রহমান গুলশানের বাসায় পৌঁছেছেন
-
আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে কী বললেন নাহিদ, আখতার, হাসনাত ও সারজিস
-
দাদা-দাদির কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করলেন রুমিন ফারহানা
-
যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে: তারেক রহমান