বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
অলি আহমদ, বীর বিক্রম
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম। বর্তমান ঠিকানা বাসা ১০২, পার্ক রোড, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
বাবা আমানত ছাফা, মা বদরুননেছা।
স্ত্রী মমতাজ বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১১।
প্রতিরোধযুদ্ধকালে অলি আহমদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দুই ভাগে ছিলেন। সামনে ও পেছনে ছিল তাঁদের প্রতিরক্ষা। অলি আহমদ জানতেন, পাকিস্তানি সেনারা সাধারণত আক্রমণ করে ভোরে, সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, সেই সুযোগে। এ জন্য তিনি সহযোদ্ধাদের ভোর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত বিশেষভাবে সজাগ ও যুদ্ধাবস্থায় রাখতেন।
২০ এপ্রিল সূর্য ওঠার আগে সহযোদ্ধা নায়েক ফয়েজ আহমদকে নিয়ে তিনি প্রতিরক্ষা তদারক করছিলেন। দেখতে দেখতে সামনে গিয়ে তিনি অবাক হয়ে যান—সেখানে প্রতিরক্ষায় ছিলেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা নেই। এটি ছিল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিরক্ষার সবচেয়ে সামনের অবস্থান—ফরোয়ার্ড পোস্ট পজিশন। তিনি বিপদের গন্ধ পান। সব সহযোদ্ধাকে তিনি স্ট্যান্ড টু পজিশনে পুনর্বিন্যাস করেন। এই পজিশনকে সামরিক ভাষায় বলা হয় যুদ্ধাবস্থা।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই অলি আহমদ ফাঁকা রাস্তায় দেখতে পান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি জিপ ও ট্রাকবহর। জিপ সামনে। ২০০ গজ দূরে থেমে শুরু করে ব্যাপক গোলাগুলি। এই আশঙ্কাতেই ছিলেন তিনি। এ জন্য সহযোদ্ধাদের আগেই প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে দ্রুত প্রত্যুত্তর পায় পাকিস্তানি সেনারা। অলি আহমদের ৫০ গজ দূরে মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন দু-তিনজন সহযোদ্ধা। তাঁর নির্দেশে তাঁরা পাকিস্তানি বহরের একদম পেছনের গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়েন।
পাঁচ গজের মধ্যে এলএমজি নিয়ে পজিশনে ছিলেন তাঁর আরেক সহযোদ্ধা। তিনি তাঁকে বলেন জিপ লক্ষ্য করে গুলি করতে। গজ বিশেক দূরে ছিল মর্টার দল। তারা মাঝের ট্রাক লক্ষ্য করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। তিনি নিজে আরআর দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আঘাত হানেন।
এ সময় অলি আহমদের নির্দেশে গর্জে ওঠে মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র। রাস্তার দুই ধার ছিল উন্মুক্ত। তারা পালাতেও পারেনি। বেশির ভাগ মারা পড়ে বা আহত হয়। খবর পেয়ে আরও পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে এবং যুদ্ধে যোগ দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে।
অলি আহমদ ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নিজ অর্থ নিতে পারবে, জানতে চেয়েছেন লু
-
নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি: বাংলাদেশ ব্যাংক
-
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী এলিস মুনরো আর নেই
-
‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন মেরিনা, পিতার নাম ছাড়াই সব সুবিধা পাবেন তিনি
-
‘সন্তান দুনিয়াতে আসবে, দেখতে পাব কি না, জানতাম না’