বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
আহমেদুর রহমান, বীর প্রতীক
গ্রাম পশ্চিম কধুরখিল, উপজেলা বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
বাবা আবদুল আলী, মা আমাতুন নূর বেগম। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও সাত মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২২০। গেজেটে নাম আহমাদুর রহমান।
মৃত্যু ২০০৬।

আহমেদুর রহমানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা গভীর রাতে ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে এলেন। তাঁরা সীমান্তসংলগ্ন এক গ্রামে ফাঁদ পাতলেন। তারপর তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের জন্য। ভোর ছয়টায় একসঙ্গে গর্জে উঠল তাঁদের সবার অস্ত্র। এ ঘটনা বরণীর। ১৯৭১ সালের ৩ অক্টোবর। বরণী যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অন্তর্গত।
আহমেদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা একটা ডায়েরিতে লিখে গেছেন। তাতে বরণীর যুদ্ধের বিবরণ আছে। তিনি লিখেছেন, ‘...অক্টোবরের ৩ তারিখের আর একটি অপারেশনের কথা আমার খুব মনে পড়ে। জায়গার নাম ছিল বরণী। আমরা খবর পেলাম পাকবাহিনী সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা বরণীর উদ্দেশে রওনা দেই। তখন আমাদের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা (খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম, পরে কর্নেল)। আমরা সেখানে ভোর তিনটার সময় অ্যামবুশ নেই। তারপর কমান্ডারের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। নির্দেশ পাই সকাল ৬টায়। আমাদের সবার অস্ত্র গর্জে ওঠে। শত্রুদের পক্ষ থেকেও আমাদের দিকে গুলি আসতে থাকে। আমাদের হঠাত্ আক্রমণে শত্রুরা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। আমরা সেখানে ছিলাম ৩০ জনের মতো। শত্রু ছিল অনেক। কয়েক প্লাটুন। আড়াই ঘণ্টার মতো যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আমি আহত হই। গোলার টুকরা আমার রানে (ঊরু) লাগে। আহত হওয়া সত্ত্বেও আমি যুদ্ধ চালিয়ে যাই। হানাদাররা (পাকিস্তানি সেনা) যেহেতু সংখ্যায় অনেক বেশি, তারা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। আমরা তাদের উদ্দেশ্য টের পেয়ে গুলি করতে করতে পিছু হটি। সেখানে আমাদের এক ইপিআর সেনা শহীদ হন।’
আহমেদুর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের ৪ নম্বর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন। এ সময়ের কিছু বর্ণনাও আছে তাঁর ডায়েরিতে। তিনি লিখেছেন, ‘...আমি তখন ইপিআরের ৪ উইংয়ের সৈনিক হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী যাদবপুরে। ২৭ মার্চ হবে, আমাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে আসে অবাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন সাদেক (সহকারী উইং কমান্ডার)। ক্যাম্পে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল সবুজ পতাকা দেখে সে আমাদের খুব গালি গালাজ করতে থাকে। আমাদের একজন (সিপাহি আশরাফ) প্রতিবাদ করলে ক্যাপ্টেন সাদেক তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে। আশরাফ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা সকলেই প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন সুবেদার মজিদ মোল্লা। তিনি ইশারা করা মাত্র আমরা ক্যাপ্টেন সাদেককে লক্ষ্য করে গুলি করি। সঙ্গে সঙ্গে সে মারা যায়।’
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরেক শিশুর মৃত্যু
-
তিনি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন
-
বিএনপি বনাম জামায়াত-চরমোনাই-এনসিপি: ‘বাগ্যুদ্ধ’ কোথায় গিয়ে থামবে
-
পারভেজ, মোস্তাফিজ থাকলে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, বলছেন রমিজ
-
‘বাবা নেই, এখন তাসনিমও নেই’, মাইলস্টোনের নিহত শিশুটির জন্য গ্রামের মানুষের আহাজারি