মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি
বাংলাদেশকে স্বীকৃতির আহ্বান
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত চেষ্টা, অজস্র ঘটনা। এখানে রইল একাত্তরের প্রতিটি দিনের বিবরণ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক আবদুস সালাম (ওরফে বারীন দত্ত) ৩ মে মুক্তাঞ্চল থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি আবেদন জানান।
ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে এদিন সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের সম্মেলনে গৃহীত বাংলাদেশ–সম্পর্কিত এক প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও একটি মীমাংসার জন্য আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রস্তাবে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক বন্দীদের অবস্থা সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এদিন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) অবস্থা জানার জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা শাহীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
টাইম ম্যাগাজিন এই দিনের সংখ্যায় বাংলাদেশ নিয়ে ‘মৃতের শহর ঢাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এদিন জানায়, বাংলাদেশের শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য তারা আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এ আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব টাকা কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে।
ভারতের দক্ষিণ–পূর্ব রেলের মহিলা সংস্থা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতির তহবিলে অর্থসহায়তা দেয়। মুম্বাইয়ের কেন্দ্রীয় ত্রাণ তহবিল প্রতিদিন তিন হাজার বাংলাদেশি শরণার্থীকে খাওয়ানোর জন্য বসিরহাট সীমান্তে লঙ্গরখানা খোলার কথা জানায়।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা বলেন, বাংলাদেশে যা চলছে তাকে গৃহযুদ্ধ বলা চলে না, এটি মুক্তিযুদ্ধ। সমগ্র জাতি পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশে
বাংলাদেশ সামরিক আইন প্রশাসক সাতজন ছাত্রনেতাকে ১০ মে সকাল ৮টার মধ্যে ঢাকার উপসামরিক আইন প্রশাসকের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ছাত্রনেতারা হলেন ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, খায়রুল আনাম খসরু, মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সেলিম মহসীন।
চট্টগ্রামের পটিয়ার খারনা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত মুজাফফারাবাদ গ্রামে স্থানীয়দের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচার গণহত্যা চালায়। প্রায় ৩০০ মানুষ গণহত্যার শিকার হন। শিশু থেকে বৃদ্ধ–বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাননি। পাকিস্তানিরা কয়েক শ বাড়িঘরে আগুন দেয়।
উত্তরাঞ্চলের নাটোরের ধলাপাড়া গ্রামের বনপাড়ায় মিশনারি হাসপাতালে পাকিস্তানি সেনারা এই দিন হামলা চালায়। তারা মিশন ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলে সেখানে আশ্রিত পরিবারের ৮৬ জন যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষকে আটক করে নারদ নদের পার্শ্ববর্তী খালপাড়ে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে তাঁদের ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ মাত্র একজনই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
ঝালকাঠির কীর্তিপাশায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে কয়েকটি ভাগে মাদ্রা, শতদল কাঠি, আতা ও ভিমরুলী গ্রামে আলাদা আলাদা ক্যাম্প স্থাপন করেন।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক ও সাত; মুক্তিযুদ্ধে পটিয়া, চট্টগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; দৈনিক পাকিস্তান, ৪ মে ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ ও ৫ মে ১৯৭১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ডিজিএফআইয়ের চেয়েও ভয়ংকর ছিল র্যাবের গোপন বন্দিশালা
-
নির্বাচিত সরকারই শ্রেষ্ঠ সরকার: মির্জা ফখরুল
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে রাশিয়া, অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের
-
‘ভূতের মুখে রামনাম’: হাছান মাহমুদের বক্তব্য নিয়ে মির্জা ফখরুল