মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি
কলকাতায় বাংলাদেশের জন্য সংগীতানুষ্ঠান
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ–বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত প্রচেষ্টা, অজস্র ঘটনাধারা। এখানে রইল একাত্তরের প্রতিটি দিনের বিবরণ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় ৩ জুলাই থেকে বাংলাদেশের সাহায্যার্থে দুই দিনব্যাপী সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয়। বাদল সত্ত্বেও রবীন্দ্রসদনের এই অনুষ্ঠানে অসংখ্য শ্রোতা আসেন। বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সুচিত্রা মিত্র। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সমিতির অন্যতম সম্পাদক দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন। দুই বাংলার শিল্পীদের পরিবেশিত রবীন্দ্র, নজরুল ও অতুলপ্রসাদের গান এবং লোকসংগীত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুনের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী কবিদের রচনার ভিত্তিতে রূপান্তরের গান পরিবেশিত হয়। এসব গানের ভেতর দিয়ে ১৯৪৭ থেকে পূর্ব পাকিস্তান কীভাবে ১৯৭১ সালে দুর্জয় বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে, তার ইতিহাস তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে দেবব্রত বিশ্বাসও তিনটি গান পরিবেশন করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লক্ষ্ণৌয়ে শাসক দল নব কংগ্রেসের দুদিনব্যাপী অধিবেশনের প্রথম দিনে বক্তৃতাকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের অন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। শরণার্থীরা দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হয়েছে বলা যাবে না।
ভারতীয় জনসংঘের সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ি উদয়পুরে দলের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, পূর্ব বাংলায় স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সাফল্যের জন্য সব ধরনের সাহায্য দেওয়া ভিন্ন ভারতের গত্যন্তর নেই। এর জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। সে জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জানা গেছে শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ। ভারত ও বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলোর উচিত তাদের প্রতিনিধিদের শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছে দাবি করা।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও ভারত সফর শেষে লন্ডনে ফিরে ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা ও সাবেক কমনওয়েলথমন্ত্রী আর্থার বটমলি বলেন, বাংলাদেশের ঘটনার জন্য টিক্কা খান সম্পূর্ণত দায়ী। অন্য সদস্য রেজিল্যান্ড প্রেন্টিস বলেন, সেখানে সমস্যার সামরিক সমাধানের চেষ্টা মারাত্মক ভুল হয়েছে।
ভারত সফররত পশ্চিম জার্মানির তিন সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের শরণার্থীদের দেখে কলকাতায় ফিরে আসেন। দলের সদস্য ড. সাইন ভিহগেনস্টাইন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাব পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানের প্রকৃত পন্থা বা সমাধান নয়। জার্মানির মতামত বরাবরই জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পক্ষে।
পাকিস্তানের পাশে সিরিয়া–ইরান–গাম্বিয়া
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল–আসাদ ও গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট স্যার দাউদা জাওয়ারা পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানান। ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাহেদি পাকিস্তানি সাংবাদিককে বলেন, ইরান পাকিস্তানের আপদকালে সব সময় পাশে থাকবে।
লন্ডনের রয়্যাল কমনওয়েলথ সোসাইটির সুযোগ–সুবিধা পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে পাকিস্তান ৩ জুলাই সোসাইটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে সোসাইটির সহসভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। পাকিস্তান হাইকমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, রয়্যাল কমনওয়েলথ সোসাইটি ব্রিটেনের রানির পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। এর সহসভাপতিদের মধ্যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথমন্ত্রীও রয়েছেন। সোসাইটির কার্যকলাপে ব্রিটেনের সরকারি নীতির প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান
গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাজশাহী শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে চোরাগোপ্তা হামলা করলে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
কুষ্টিয়া জেলার মহিষাকুণ্ডিতে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা আহত হয়। অন্য আরেক দল মুক্তিযোদ্ধার ছোড়া বোমায় চুয়াডাঙ্গা থানা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সূত্র: ইত্তেফাক, ৪ ও ৫ জুলাই; আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, ভারত, ৪ ও ৫ জুলাই ১৯৭১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
প্রাথমিক ভোট গণনার ফল যে কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে